শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজ: কিচেন গার্ডেন তো অনেকের বাড়িতেই থাকে। একফালি ব্যালকনি বা ছাদের কোণে রাখা টব থেকে লাল টুকটুকে টোম্যাটো বা কাঁচা মরিচ উঁকি মারে। তবে সেখানেই যদি আস্ত একটা জলাশয় থাকে!
একেবারেই রসিকতা নয়। এমনটাই করে দেখিয়েছেন আসামের এক পরিবেশ বিজ্ঞানী অমরজ্যোতি কশ্যপ। তাতেই চলছে মাছের চাষ। সঙ্গে বাগানও। কী করে সম্ভব হল?
আসামের হাতিগাঁও এলাকার বাসিন্দা অমরজ্যোতি নিজের দোতলা বাড়ির ছাদের একাংশ জুড়ে তৈরি করেছেন জলাশয়। মাস খানেক ধরে সেখানেই চলছে মাছের চাষ।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান অমরজ্যোতির মতে, শহুরে এলাকায় যেখানে জায়গাজমির অভাব, সেখানে এ ভাবে মাছ চাষ করা যেতে পারে।
অমরজ্যোতি জানিয়েছেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করলেই এমন একটা আস্ত জলাশয়ের মালিক হতে পারেন যে কেউ। মাছ চাষ করে তা থেকে অতিরিক্ত আয়ও করতে পারেন শহুরে চাষিরা। কী করে? ওই জলাশয় থেকে মাছ ধরে খেতে পারেন বা চাইলে তা বাজারে বিক্রিও করতে পারেন।
ব্যবসায়িক কারণ বাদ দিলেও বাড়ির শোভা বাড়াতে বা স্রেফ রিল্যাক্স করতেও এই জলাশয়ের জুড়ি নেই। অমরজ্যোতি বলেন, ‘গোটা ছাদের মধ্যে হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে আমার জলাশয়। ১৪ ফুট বিস্তৃত, ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট গভীর। এখন গোল্ডেন কার্প মাছ চাষ শুরু করছি। তা ছাড়া, এর পাশে ছাতার নীচে বসে পানীয়তে চুমুক দিতে দিতে রিল্যাক্সও করা যায়।’
ললিতচন্দ্র ভারতী কলেজ ও গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অমরজ্যোতি এ দশকের গোড়ায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তোলেন। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেনলেবল প্র্যাকটিস নিয়ে গবেষণার কাজ ছাড়া, স্বচ্ছ ভারত মিশনের অন্তর্গত অর্গ্যানিক রুফটপ গার্ডেনিংয়ের প্রচার করে এই সংস্থা।
২০০৫-এ ওয়েস্ট অ্যাসিমিলেটর নামে এক যন্ত্রও তৈরি করেছেন অমরজ্যোতি, যা ঘরের বর্জ্যপদার্থকে এক দিনেই পচিয়ে তা কীটপতঙ্গ নিরোধী পদার্থে পরিণত করে। অমরজ্যোতির দাবি, অন্তত ১২ হাজার লোক তাঁর এই যন্ত্র ব্যবহার করছেন। এতে ঘরে বসেই কঠিন বর্জ্যকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করে জৈব সার তৈরি করা যায়। যা কিচেন গার্ডেনের কাজে আসে।
ছাদে জলাশয় করেই থেমে থাকেননি অমরজ্যোতি। সেই সঙ্গে ৩০ ধরনের অর্গ্যানিক গ্রিন টি প্লান্টও লাগিয়েছেন তিনি। এর থেকে তাঁর ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ও হয়েছে বলে দাবি তাঁর। তাঁর দাবি, আয়ের পাশাপাশি অ্যালঝাইমার্স বা পার্কিনসন্স-এর মতো রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয় অর্গ্যানিক গ্রিন টি।
অমরজ্যোতি জানিয়েছেন, তার বাড়িতে ৪ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে রয়েছে ছাদ। তাতে আয়েশ করার জায়গা ছাড়াও হাজার বর্গফুটে রয়েছে জলাশয়। আরও হাজার বর্গফুট জুড়ে রয়েছে অর্গ্যানিক কিচেন গার্ডেন। সেখানে মরসুমি ঢেঁড়শ, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপির মতো শাক-সব্জির ফলন হয়।
গ্রিন টি ছাড়া আর কিছুই বিক্রি করেন না অমরজ্যোতি। তিনি জানিয়েছেন, ছাদের বাগান থেকে যা ফলন হয়, তা নিজেদের খাওয়াদাওয়ার পর বন্ধুবান্ধব-পড়শিদের মধ্যে তা বিলিয়ে দেন।